DhakaWednesday , 16 October 2024
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. জাতীয়
  5. তথ্যপ্রযুক্তি
  6. থেলাধুলা
  7. ধর্ম
  8. ফিচার
  9. বিনোদন
  10. মহিলা অঙ্গন
  11. রাজনীতি
  12. রাজশাহী
  13. শিক্ষা
  14. সারাদেশ
  15. স্বাস্থ্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মানুষের মর্যাদার সোপান বিনয়

Link Copied!

facebook sharing button
বাংলার সকাল ডেস্ক : পৃথিবীর সব মানুষের একটি নাম থাকে, শক্তিমান ও প্রভাবশালী মানুষের থাকে বিভিন্ন প্রতীক। আগের যুগের রাজা-বাদশাহরা মাথায় মুকুট পরতেন। মুকুট ছিল তাদের মর্যাদার প্রতীক। মুকুট পরিহিত রাজা-বাদশাহকে সাধারণ মানুষ ক্ষমতার কারণে ভয়ে সম্মান দেখালেও অন্তরে তাদের সবার জন্য সম্মান লালন করা হতো না। কিন্তু আরেক ধরনের মুকুট আছে, যে মুকুট যার মাঝেই থাকুক না কেন, মানুষ তাকে আন্তরিকভাবেই সম্মান করে ও ভালোবাসে। সেই মুকুটের নাম বিনয়। বিনয় এমন এক মুকুট, যা সত্যিকারার্থে মানুষের সম্মান আর মর্যাদা বৃদ্ধি করে ও সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন বিনয়ের অনুপম দৃষ্টান্ত। খুবই সাদামাটা ছিল তাঁর জীবনযাপন। তিনি কখনো অহংকার করতেন না এবং অহংকার করাকে পছন্দ করতেন না। মসজিদে, মজলিসে, চলার পথে অথবা যুদ্ধের ময়দানে, সব জায়গায় সাহাবিদের সঙ্গে সাধারণভাবে থাকতেন। অপরিচিত কেউ এলে কোনোভাবেই বুঝতে পারতেন না সমবেত লোকদের মধ্যে নবী কে? নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিজ্ঞাসা করতে হতো, ‘তোমাদের মধ্যে কে মুহাম্মদ?’ (বুখারি : ৬৩)
নবীজি (সা.) শুধু একজন ধর্ম প্রচারকই ছিলেন না, ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি তিনি সামাজিক সব ধরনের ইতিবাচক কাজে অংশগ্রহণ করতেন। এমনকি শাসনকার্যও পরিচালনা করেছেন। মদিনা রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন তিনি। তবে শাসক বললে আমাদের চোখে যে ধরনের চিত্র ভেসে ওঠে, তিনি তেমন শাসক ছিলেন না। শাসক হিসেবেও তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। অসহায়ের পাশে দাঁড়াতেন। বিপদগ্রস্তদের সহযোগিতা করতেন।
অপরাধীর ইনসাফভিত্তিক বিচার করতেন। কেউ তাঁর সামনে এসে ভয়ে কাঁপুক, প্রয়োজনীয় কথা বলতে ভয় পাক, এটা তিনি কখনো চাইতেন না। হজরত আবু মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একদা অপরিচিত এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এলেন। তিনি দূরদেশ থেকে এসেছিলেন। রাসুল (সা.)-এর সামনে এমন অবস্থায় বসলেন যে, তিনি ভয়ে কাঁপছিলেন। রাসুল (সা.) তাকে অভয় দিয়ে বললেন, ‘শান্ত হও, আমি কোনো রাজা-বাদশাহ নই। আমি একজন সাধারণ নারীর সন্তান।’ (ইবনে মাজাহ : ৩৩১২)
অনেক সময় আল্লাহর রাসুলের কাছে গ্রামের সাধারণ মানুষরা আসতেন। তারা ভদ্রতা-সৌজন্যতা সম্পর্কে কিছুই বুঝতেন না। রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে অনেক অসৌজন্যপূর্ণ আচরণ তারা করে ফেলত। আল্লাহর রাসুল এতে কিছুই মনে করতেন না। একবারের ঘটনা বর্ণনা করেছেন হজরত আনাস (রা.)। তিনি বলেন, ‘আমরা একবার নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে হাঁটছিলাম। তাঁর গায়ে ছিল মোটা পাড়ের নাজরানি চাদর। হঠাৎ এক গ্রাম্য ব্যক্তি এসে চাদর ধরে প্রচ- জোরে টান দিল। আমি দেখলাম, জোরে টান দেওয়ার কারণে নবীজির কাঁধে চাদরের দাগ বসে গেছে। এবার লোকটি বলল, ‘হে মুহাম্মদ! তোমার কাছে আল্লাহর যে সম্পদ রয়েছে, তা থেকে আমাকে দিতে বলো। কষ্ট পাওয়ার পরও নবীজি মুচকি হাসলেন। তারপর বায়তুল মাল থেকে তাকে কিছু দিয়ে দিতে বললেন’ (বুখারি : ৩১৪৯)।
আরেক গ্রাম্য ব্যক্তির ঘটনা হজরত আনাস (রা.)-এর বর্ণনায় পাওয়া যায়, ‘গ্রাম্য একজন ব্যক্তি এসে নবীজির মসজিদে প্রস্রাব করা শুরু করল। কয়েকজন সাহাবি নবীজির সঙ্গে সেখানে বসা ছিলেন। তারা উঠে গিয়ে তাকে বাধা দিতে চাইলেন। নবীজি বললেন তাকে বাধা দিয়ো না। প্রস্রাব করা শেষ হলে সেখানে এক বালতি পানি এনে ঠেলে দিতে বললেন।’ (বুখারি : ৬০২৫)
শিশু-কিশোরদের সঙ্গেও নবীজি সুন্দর আচরণ করতেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘তিনি আনসারি সাহাবিদের বাসায় যেতেন। তাদের বাচ্চাদের সালাম দিতেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন’ (ইবনে হিব্বান : ৪৫৯)। আরেক বর্ণনায় এসেছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আমি দীর্ঘ নামাজের নিয়তে নামাজ শুরু করি। কিন্তু পরে যখন কোনো শিশুর কান্না আমার কানে ভেসে আসে, সেটা শুনে আমি সালাত সংক্ষিপ্ত করে ফেলি। কেননা শিশু কাঁদলে যে মায়ের মন খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে, তা আমি জানি’ (বুখারি : ৭০৯)। মক্কা থেকে নবীজির হিজরত করার ঘটনা আমাদের সবার জানা। কাফেরদের নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে করতে একসময় নবীজি ও সাহাবিদের হিজরত করতে হয় মদিনায়। এরপর অনেক দিন কেটে যায়।
পরে বিজয় হয় মক্কা। সেই বিজয়ের ঘটনাও আমাদের জানা। আমরা সাধারণ বিজয়ীদের দেখি। বিজয়ের অহংকারে, ক্ষমতার দাপটে তাদের অবস্থা আমাদের চোখে পড়ে। কিন্তু মক্কা বিজয়ের সময় আল্লাহর রাসুল ছিলেন একদম বিনয়ে অবনত। সাহাবিরাও ছিলেন বিনয়ে অবনত। বিজয়ের অহংকার, ক্ষমতার প্রতাপ কিছুই ছিল না তাদের মধ্যে। আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ প্রদত্ত বিজয় দেখে রাসুল (সা.)-এর মাথা বিনয়ে এত বেশি নিচু হয়েছিল যে, যেন তাঁর দাড়ি বাহনবস্তুর পিঠ স্পর্শ করছিল।’ (সিরাতে ইবনে হিশাম : ২/৪০৫)
রাসুল (সা.) বিনয়ী ছিলেন। সাহাবিরাও ছিলেন বিনয়ী। রাসুল (সা.)-এর উম্মত হিসেবে আমাদেরও উচিত বিনয়ী হওয়া, অহংকার পরিত্যাগ করা। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না’ (সুরা নিসা : ৩৬)। আমরা যদি মাটির মানুষ হয়ে মাটির মতো বিনয়ী হতে পারি, তবে আল্লাহর কাছে প্রিয় হতে পারব। সমাজে মানুষের কাছে সম্মান আর মর্যাদাবান হতে পারব। মহান আল্লাহ আমাদের বিনয়ী জীবনে অভ্যস্ত হওয়ার তওফিক দান করুন।

কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।